বাঙালির বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২০২১ সালের অনুমান অনুসারে, এই রাজ্যে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি নাগরিক মুসলমান। আটটি জেলায় জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশের বেশি মুসলমান।
কোভিড মিটলেই রাজ্যে নয়া নাগরিকত্ব আইন জারি হবে, এই কথাটির অর্থ কী? পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কথাটির তাৎপর্যই বা কী? চরিত্রগত ভাবে সংবিধানবিরোধী এই আইনটির প্রকৃত উদ্দেশ্য নাগরিকত্বের প্রশ্নে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রভেদ করা। এই আইনের অবস্থানটি নাগপুরের রাজনৈতিক দর্শনের পন্থী— সাভারকর থেকে গোলওয়ালকর, হিন্দুত্ববাদের প্রত্যেক তাত্ত্বিকই কোনও না কোনও ভাষায় মুসলমানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব অস্বীকার করেছেন। নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সেই নীতির প্রায়োগিক রূপ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে আগত মুসলমানরা অনুপ্রবেশকারী, এবং অন্য ধর্মাবলম্বীরা শরণার্থী, এমন একটি অলীক বাইনারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা কত, সেই প্রশ্নের সদুত্তর আজ অবধি কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। কিন্তু সেই অনুপ্রবেশের বাহানাতেই জনজীবনে কী তাণ্ডব সৃষ্টি হতে পারে, তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত অসম। অমিত শাহের অনতিপ্রচ্ছন্ন হুমকির একটিই অর্থ হয়— তাঁরা বাংলায় অসমের অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চান।
২০২১ সালের অনুমান অনুসারে, এই রাজ্যে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি নাগরিক মুসলমান। আটটি জেলায় জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশের বেশি মুসলমান। ফলে, এই রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জির জোড়া অস্ত্র প্রয়োগ করার অর্থ, রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ ঘোষণা। তার বিরোধিতা করার জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা বিরোধী হওয়ার প্রয়োজন নেই— শুধুমাত্র বাঙালি পরিচয়টিই যথেষ্ট। মুসলমানদের বাদ দিয়ে যে বাংলা নয়, হতে পারে না, এই কথাটি যত বার প্রয়োজন, বলতে হবে। এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি যে, অসমে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নামে যাঁদের বিপন্ন করা হয়েছে, তাঁদের সিংহভাগ বাঙালি, এবং অনেকেই ধর্মে হিন্দু। দিল্লির সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সংঘাতেও হিন্দুত্ববাদীদের বাঙালি-বিরোধী সুরটি স্পষ্ট। কেউ বলতেই পারেন যে, অমিত শাহ এক অর্থে সমগ্র বাংলার বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করে গেলেন।
প্রকাশকঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
প্রকাশকালঃ ১১ মে ২০২২ ০৪:৫৫
Entry type: সম্পাদকীয়
Source: বাঙালির বিরুদ্ধে যুদ্ধ