Skip to main content

রুপন্তীর হাতে খেলা করে লাঠি


খেলার মাঠে লাঠিয়াল রুপন্তী l ছবি: সংগৃহীত












খোলা কালো চুল, কালো পোশাক। ডাগর চোখে তেজি ভাব। এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে ঢাল। কখনো লাঠির বদলে তলোয়ার। ছুটে চলেছেন প্রতিপক্ষের দিকে। লড়াই করছেন। এই লড়াকুর নাম মঞ্জুরীন সাবরীন চৌধুরী। রুপন্তী চৌধুরী নামেই পরিচিত কাছের মানুষের কাছে।


রুপন্তীর প্রতিপক্ষ লাঠিয়াল একজন পুরুষ। তাতে কী! হাজার দর্শকের মাঝে রুপন্তী চৌধুরীর লাঠি ও তলোয়ারের কৌশল হাততালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনিতে পুরো এলাকা জমজমাট।


১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের মাঠে লাঠিখেলায় অন্যদের মতো রুপন্তীও লাঠি খেলা দেখান। দেশের লাঠিয়ালদের একমাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী’ দুই দিনের লাঠিখেলা উৎসবের আয়োজন করেছিল। কুষ্টিয়া ছাড়াও নড়াইল, ঝিনাইদহ, পাবনা, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ২৫টি দলের প্রায় ৫০০ লাঠিয়াল এই উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। এসব দলে পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারীরাও ছিলেন।

মঞ্জুরীন সাবরীন চৌধুরী (রুপন্তী চৌধুরী) l ছবি: প্রথম আলো


নিছক একটি খেলা নয় এটা, আত্মরক্ষার কৌশলও বটে, বলছিলেন রুপন্তী চৌধুরী। কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরে তাঁদের বাড়ি। দাদা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৩৩ সালে লাঠিখেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে ও সারা দেশের লাঠিয়ালদের সংগঠিত করতে একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেন। সেই থেকে শুরু চৌধুরী পরিবারে লাঠিখেলা। এরপর বাবা রতন চৌধুরী। রুপন্তীর বয়স যখন সাত বছর, তখন বাবার খেলা দেখে হাতে তুলে নেন লাঠি। লাঠি ঘোরানো রপ্ত করতে থাকেন। ওস্তাদ ছিলেন ওসমান সরদার ও শুকুর আলী।
রুপন্তীর পরিবারের সবাই লাঠিখেলার সঙ্গে যুক্ত। আছেন নারীরাও। তাঁর ফুফু হাসনা বানু দেশের প্রথম নারী লাঠিয়াল। ফুফাতো বোন শাহিনা সুলতানা ও শারমীন সুলতানাও লাঠিয়াল। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া রুপন্তীর ছোট বোন মঞ্জুরীন আফরিনও লাঠির কসরত শিখছে।
লাঠিখেলায় কেন? রুপন্তীর সোজা জবাব, ‘বাবার কোনো ছেলেসন্তান ছিল না। চেয়েছিলেন তাঁর মেয়েরাই ছেলেদের কাজ করবে। নিজেই নিজের আত্মরক্ষা করবে। তাই নিজেকে কখনোই অন্যের থেকে আলাদা ভাবেননি। সেই থেকে আর পিছু হটা হয়নি। লাঠি, সড়কি, তলোয়ার ও রামদা চালাতে পারেন তিনি।


বাবার সঙ্গে নড়াইলের ‘সুলতান মেলা’য় তিনবার লাঠিখেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গত বছর পয়লা বৈশাখে লাঠিখেলা দেখিয়েছিলেন। আর কুষ্টিয়ায় লাঠিখেলার আয়োজন হলে কখনোই মিস করেন না রুপন্তী। এসব আয়োজনে এই পরিবারের সদস্যরা সবাই যোগ দেন—যেখানেই থাকুন না কেন ছুটে আসেন কুষ্টিয়ায়।


রুপন্তী চৌধুরী ঢাকার রূপপুর মডেল কলেজে পড়ছেন। মিরপুরে থাকেন স্বামীর সঙ্গে। তাঁর স্বামী সাব্বির হাসান চৌধুরীও লাঠি খেলেন। তিনি আশুলিয়ার সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।


শুধু খেলাই নয়, লাঠিখেলা আত্মরক্ষার কৌশলও বটে। কোনো বিপদে হাতের কাছে একটা লাঠিজাতীয় কিছু থাকলে সেটা দিয়ে নারীরা নিজেদের রক্ষা করতে পারেন অনায়াসে। এটা শিখতে তেমন সময় বা টাকা খরচ লাগে না। এটা রপ্ত করতে হয়। এই সময়ে এটা ছড়িয়ে দেওয়া খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন রুপন্তী চৌধুরী।


হাসনা বানুর ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন এখন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক। তিনি মনে করেন, আধুনিক খেলাধুলার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রুপন্তীর মতো দেশের অন্য নারীদেরও এর প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।


Published/Broadcast by: প্রথম আলো
Date published: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
Last modified: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
Author: তৌহিদী হাসান
Entry Type: ফিচার
Source: https://www.prothomalo.com/life/রুপন্তীর-হাতে-খেলা-করে-লাঠি?fbclid=IwAR36cqUW0lzpLWEYDwgPwLtbnEsptcsuq5ojnd2GeC5zqMoxLveHK6wyvOE