সৌদি আরবের রিয়াদের (ক্রিমিনাল কোর্ট ৬) আদালতে আবিরন বেগম হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক শুনানি শুরু হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী এবং নারী অভিবাসন নিয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদি আরবে নির্যাতন বা হত্যার শিকার হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হওয়ার নজির কম।
খুলনার আবিরন বেগম সরকারিভাবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। দুই বছর তিন মাস পরে গত বছর আবিরন লাশ হয়ে দেশে ফেরেন। লাশের সঙ্গে থাকা আবিরনের মৃত্যুসনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা ছিল মার্ডার (হত্যা)।
প্রথম দিনের শুনানি শেষে আদালত আবিরনের ওয়ারিশদের পাঠানো পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে কিছু অতিরিক্ত ক্ষমতা সংযোজন করে আবার পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছেন।
সন্তান না হওয়ায় ২০ বছর আগে স্বামী তাড়িয়ে দিলে আবিরন বাবার বাড়ি ফেরত এসেছিলেন। বিদেশ গিয়েছিলেন বোনদের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ জোগাতে। ছয় বোনের মধ্যে আবিরন ছিলেন মেজ।
নমিতা হালদার তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে রিয়াদ দূতাবাসের মাধ্যমে আবিরনের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়, অভিযুক্ত নির্যাতনকারীদের আদালতের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।
নমিতা হালদার এর আগে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। শনিবার প্রথম আলোকে বললেন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকদের নির্যাতন বা নির্যাতন করে মেরে ফেলার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত, পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে সৌদি আরবে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করা হয়েছে এ ধরনের নজির কম। তাই আবিরন ন্যায়বিচার পাবেন, সে প্রত্যাশা করা যায়।
![]() |
মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪০ বছরের বেশি বয়সী আবিরনকে পিটিয়ে, গরম পানিতে ঝলসে অর্থাৎ বিভিন্ন নির্যাতন করে সৌদি আরবে খুন করা হয়। সাত মাস সেখানকার এক মর্গে ছিল আবিরনের লাশ।
আবিরনের বোন রেশমা খাতুনও প্রথম আলোকে বলেছেন, আবিরন যে বাসায় কাজ করতেন, সেখানে মোট আটজন পুরুষ থাকতেন। তাঁরা আবিরনকে যৌন নির্যাতনও করতেন। খাবার খেতে না দেওয়া, গ্রিলে মাথা ঠুকে দেওয়াসহ নানান নির্যাতন তো ছিলই। আবিরন দুই বছরের বেশি সময় কাজ করলেও তাঁর পরিবার মাত্র ১৬ হাজার টাকা পেয়েছে। দালাল চক্রসহ অন্যরা আবিরনের বেতনের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বললেন, আবিরনের হত্যা মামলায় শুনানি শুরু হয়েছে। সৌদি আরবে একটি ঘটনাতেও বা প্রতীকীভাবে একটি মামলাতেও যদি অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়, তখন অন্য মালিকেরা কিছুটা হলেও সচেতন হতে বাধ্য হবেন।
আবিরনের পরিবার লাশ পরিবহন, সৎকারসহ সরকারের কাছ থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছে।
Date published: ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০
Last modified: ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০
Author: মানসুরা হোসাইন
Entry Type: -
Source: https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8C%E0%A6%A6%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%83%E0%A6%96-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B6-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8