মঞ্জুরীন সাবরিন চৌধুরী যিনি রুপন্তী চৌধুরী নামেই পরিচিতি পেয়েছেন তাঁর লাঠি খেলার কারণে।
লাঠি খেলার ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করেছেন রুপন্তীর দাদা সিরাজুল হক চৌধুরী । ১৯৩৩ সালে তিনি সারা দেশের লাঠিয়ালদের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন।
রুপন্তীর বাবা রতন চৌধুরীও ছিলেন নামী লাঠিয়াল। আর তাঁদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছেন রুপন্তী।
কুষ্টিয়ার মজমপুরে রুপন্তীর জন্ম। তাঁর বয়স যখন ছয়-সাত তখন থেকেই লাঠিখেলা শুরু করেছেন তিনি।
কেন এই আগ্রহ জানতে চাইলে বিবিসি বাংলার আফরোজা নীলাকে তিনি বলেন "আমার ফ্যামিলির সবাইকে দেখে বাবা, ফুপিরা, ভাই-বোন সবাইকে দেখেই লাঠি খেলার প্রতি অনেকটা আগ্রহ তৈরি হয় আমার মধ্যে। আমার পরিবারের সবাই লাঠিয়াল। আমার ফুপু হাসনা বানু ছিলেন দেশের প্রথম নারী লাঠিয়াল।"
তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া উৎসাহ-অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করে রুপন্তী বলেন, "আমার বাবা সবসময় চাইতেন যে আমরা নিজেরা নিজেদের মতো চলাফেরা করি। যেহেতু আমরা দুই বোন, ভাই নেই। যেহেতু আমরা মেয়ে, সেহেতু উনি চাইতেন আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠি, নিজেই যেন নিজেকে রক্ষা করতে পারি"।
SABBIR HASAN CHOWDHURY কয়েকজন লাঠিয়ালের সঙ্গে রুপন্তী |
SABBIR HASAN CHOWDHURY তেজি ভাব, লাল টিপ, কালো পোশাকে লাঠি হাতে রুপন্তীর এই সাজ দেখা যায় লাঠি খেলার সময় |
বাবা-মা আর বোনের সঙ্গে রুপন্তী |
রুপন্তীর মা অবশ্য লাঠিয়াল নন, তবে তিনি সবসময় মেয়েদের লাঠি খেলায় উৎসাহ দিতেন। ছোটবেলাতেই মেয়েকে তার বাবার সঙ্গে পাঠিয়ে দিতেন।
"বিভিন্ন উৎসবে আমার বাবা যখন যেতেন, আমি তখন অনেক ছোট, মা তখন আমাকে পাঠিয়ে দিতেন বা বলতেন আমাকে যেন নিয়ে যাওয়া হয়"।
সুলতান মেলায় বাবা রতন চৌধুরীর সঙ্গে লাঠি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন রুপন্তী, সেই থেকেই রুপন্তী আর থামাননি তাঁর খেলা।
লাঠি, সড়কি, তলোয়ার ও রামদাও চালাতে পারেন তিনি।
খেলার অনুশীলন যখন করেন অনেক আঘাতও পান তিনি। "খেলতে খেলতে নখ উঠে যায়, গাল কেটে যায়" রুপন্তীর বোনের ভাষায় "আপু ভালো জানে বলে কম ব্যাথা পায়, অন্যরাতো আরো বেশি আঘাত পায়"।
রুপন্তী খেলা শিখেছেন ওস্তাদ ওসমান সরদারের কাছে।
রুপন্তীর দাদা সিরাজুল হক চৌধুরী |
রুপন্তী চৌধুরী রুপন্তীর ওস্তাদ ওসমান সরদার, তিনি রুপন্তীর দাদা সিরাজুল হক চৌধুরীর কাছেই লাঠি খেলা শিখেছেন। |
রুপন্তীর ভাষায় "তাঁর কাছে লাঠি খেলা শেখা বলা যায় যে দাদার কাছে শেখার মতোই। উনি আমার দাদার হাতে তৈরি, দাদার কাছে লাঠি খেলা শিখেছেন। যেহেতু দাদা বেঁচে ছিলেন না, আমার ওস্তাদ ওসমান সরদার চেয়েছিলেন দাদার কাছ থেকে শেখা কৌশল যেন আমাকে কিছুটা হলেও উনি দিয়ে যেতে পারেন"।
এসএসসি পরীক্ষার আগে রুপন্তীর বাবা মারা যান। রেজাল্টের পর বিয়েও হয়ে যায় তাঁর।
তবে বিয়ের পর পড়ালেখা ও লাঠি খেলা একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন রুপন্তী। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়ছেন।
"আমার দাদা লাঠি খেলা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাঁর জন্যই বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে উঠেছে। তিনি অনেক বই লিখেছেন। চেষ্টা করেছেন মার্শাল আর্টের সাথে লাঠি খেলা কম্বাইন্ড করে যেটা তৈরি করা যায় -সেটা আনতে। এরপরে লাঠি খেলাটা চলে আসছে তবে মার্শাল আর্ট কিছুটা বাদ পড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি আবার নতুন করে মার্শাল আর্ট লাঠিটা কম্বাইন্ড করার জন্য।"
"আমার দাদার স্বপ্ন ছিল লাঠি খেলাটা একদিন বিশ্বে পরিচিতি অর্জন করবে দেশীয় ঐতিহ্য হিসেবে । সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে যেতে চাই" বলেন রুপন্তী।
তাঁর গল্প দেখুন ভিডিওতে।
রুপন্তী চৌধুরী বোনের সঙ্গে রুপন্তী |
স্বামী সাব্বির হাসান চৌধুরীও লাঠি খেলেন, এসএসসি পরীক্ষার পর চাচাতো ভাই সাব্বিরের সঙ্গে বিয়ে হয় রুপন্তীর। তারপর থেকে দুজনে মিলেই লাঠি খেলার জন্য কাজ করছেন। বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের এই ঐতিহ্য পৌঁছে দিতে চান তারা। |
Published/Broadcast by: বিবিসি বাংলা
Date published: ৯ মে ২০১৯
Last modified: ৯ মে ২০১৯
Author: N/A
Entry Type: ফিচার
Source: https://www.bbc.com/bengali/news-48206055?fbclid=IwAR3rvjy0xFycDJ3ww1WskX1cskw9py_qRsvwxnhFpu-0Zoc8Nov1iQ948ao