মোঘল আমলে বাংলার কিছু ভূস্বামী অভিজাত এবং এমনকি পুরোহিত শ্রেণিরও কিছু সদস্য ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। আকবরের এক সেনাপতির কাছে পরাজিত হয়ে (মুঙ্গের জেলার) খরগপুরের রাজারা তাদের পারিবারিক সম্পত্তির ওপর অধিকার বজায় রাখার শর্ত হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে কথিত আছে...
বাংলার ইসলামীকরণ বিষয়ক তত্ত্বসমূহ
ইংরেজরা বাংলায় যতদিন ধরে থেকেছে, সে তুলনায় বেশ খানিকটা দেরিতেই তারা প্রদেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিস্তৃতির পূর্ণ মাত্রাটি বুঝতে সক্ষম হয়। বৃটিশদের কার্যক্রম প্রধানত দক্ষিণ-পশ্চিমের হিন্দু অধ্যূষিত কলকাতা কেন্দ্রিক ছিল। ফলে ঊনিশ শতকের অধিকাংশ সময় জুড়ে উপনিবেশিক কর্মকর্তারা বাংলার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোকে একটি বিস্তৃত এবং তুলনামূলকভাবে সুদূর পশ্চাৎভূমি হিসেবেই অনুভব করেছেন যার সাংস্কৃতিক মুখচ্ছবিটি তাদের কাছে মূলত অপরিচিত ছিল। এর ফলে ১৮৭২ সালে প্রদেশটির প্রথম আনুষ্ঠানিক আদমশুমারীতে যখন দেখা গেলো মুসলমানরা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পাবনা এবং রাজশাহী জেলায় ৭০ ভাগ কিংবা তারও বেশি এবং বগুড়াতে ৮০ ভাগের বেশি (মানচিত্রটি দ্রষ্টব্য), তারা রীতমত বিস্মিত হয়েছিলেন। এই প্রদেশ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমানে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সরকারী কর্মকর্তা জেমস ওয়াইজ লেখেন যে, '১৮৭২ সালের আদমশুমারীতে উদঘাটিত সব চাইতে কৌতুহলোদ্দীপক তথ্যটি হলো পুরনো রাজধানীগুলোর চারদিকে জড়ো হয়ে নয়, বরং বদ্বীপের পাললিক সমতলে - নিন্মবাঙলায় সুবিপুল সংখ্যক মুসলমান বসবাস করে।'
তিনি তার মন্তব্যে আরও বলেন যে, 'নিম্ন ও পূর্ব বাংলায় মুসলমান ধর্মের বিস্তারের ইতিহাস আজকের দিনে এত বিপুল গুরুত্ববহ একটি বিষয় যে এটি সাবধানে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।'
বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই খতিয়ে দেখা হয়েছিল। ১৮৭২ সালের আদমশুমারী উত্তপ্ত একটা বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়, এই বিতর্কটি ঊনিশ শতকের বাকি সময়টুকু এবং বিশ শতকের বেশ একটা বড় সময় জুড়ে জারি ছিল। আদমশুমারির প্রতিবেদনের সঙ্কলক হেনরি বেভারলি নিজেই এই যুদ্ধে প্রথম গোলাটা ছোড়েন। মুসলিম শাসনের কেন্দ্রগুলো থেকে বহু দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে দলে দলে মুসলমানের দৃশ্যমান হবার আপাতদৃষ্ট অসঙ্গতিটা খেয়াল করে বেভারলি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তার সিদ্ধান্তটি এই যে, বাঙলায় মুসলমানদের অস্তিত্ব মোঘলদের বংশস্তিারের কারণে ততটা ঘটেনি, বরং সাবেক বাসিন্দাদের ধর্মান্তরের কারণেই তা বেশি বেশি ঘটেছে, কঠোর একটি বর্ণ শৃঙ্খলের বন্দোবস্ত হিন্দু ধর্মকে এদের কাছে অসহনীয় করে তুলেছিল। সংক্ষেপে, তিনি অভিবাসন তত্ত্বকে নাকচ করেন এবং এর বদলে সামাজিক মুক্তি তত্ত্বের একটি প্রাথমিক সংস্করণের রুপরেখা প্রণয়ন করেন। এরপর থেকে ইসলামীকরণ বিষয়ে এই তত্ত্বই বৃটিশ চিন্তায় আধিপত্য করবে এবং অবশেষে অধিকাংশ মুসলমানও এটাকে গ্রহণ করবেন।
কিন্তু বেভারলির এই ভাষ্যটি বিনা মোকাবেলায় পার পায়নি। ১৮৭২ সালের আদমশুমারীর সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশের পরপরই আবু এ. গজনভী নামের ময়মনসিংহ জেলার একজন সভ্রান্ত মুসলমান ভদ্রলোক গণধর্মান্তর সংঘটিত হওয়া বিষয়ক বেভারলির যুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে তার জেলার কালেক্টর বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। গজনভী এর বদলে প্রস্তাব করেন যে, 'আধুনিক মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ চণ্ডাল ও কৈবর্তদের বংশধর নয়, বরং তারা বিদেশী বংশোদ্ভূত, যদিও অনেকক্ষেত্রে তা কম বা বেশি দূরবর্তী মাত্রায় হয়ে থাকতে পারে।' গজনভী তার যুক্তির পক্ষে তুর্কী বিজয়ের আগে আরব অভিবাসন, সুলতান হোসেন শাহ কর্তৃক বিদেশীদের ভূমিদান, মোঘল বিজয়ের পর আফগানদের 'প্রতিটি পল্লীতে' ছড়িয়ে পড়া, বহুবিবাহ ও বিধবা বিবাহের প্রচলের কারণে মুসলমানদের জন্মহারের আধিক্য, তাদের দীর্ঘায়ু এবং মুসলমানদের মাঝে বর্ণপ্রথার এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্রহ্মাচর্যের অনুপস্থিতির নজির প্রদর্শন করেন। 'কিছু' ধর্মান্তরকরণের কথা তিনি স্বীকার করলেও গজনভী জোর দিয়ে বলেন যে সেটা নিন্মবর্ণের হিন্দুদের মাঝে ঘটেনি। "কেন আমরা নিন্মবর্ণের হিন্দুদের ধর্মান্তরের কথাই কেবল বলবো?" তিনি জানতে চান, "কেন আমরা বিশেষভাবে ময়মনসিংহসহ নানান জেলার মুসলমান রাজপুত দেওয়ানের কথা ভুলে যাবো... একইভাবে সিলেটে মজুমদার, ফরিদপুরে রাজাসাহেব, বিক্রমপুরে গাঙুলিসহ আরও অনেকেই আছেন।"
ইতোমধ্যে ঊনিশ শতকের শেষ দশকগুলোতে বৃটিশ কর্মকর্তাদের মহলে ইসলামীকরণ প্রশ্নটিতে একটি ঐকমত্য স্পষ্ট হতে থাকে। এখানে আমরা জেসম ওয়াইজের কাজকে খতিয়ে দেখতে পারি, দশ বছর ঢাকার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ঝানু এই কর্মকর্তা তার অভিমত 'পূর্ববাংলার মুসলমান' (১৮৯৪) নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধে সবিস্তারে বলেছেন। ওয়াইজ তার আলোচনা শুরুই করেন গজনভীর মত আশরাফ শ্রেণির মুখপাত্রদের পছন্দের অভিবাসন তত্ত্বটি খারিজ করে। 'মুসলমানদের ইতিহাসগুলোতে ভারতের ওপরের অংশ থেকে বড় আকারের মুসলমান অভিবাসনের কোন উল্লেখ নেই, এবং আমরা জানি যে আকবরের আমলে মোঘল হানাদারদের কাছে বাংলার আবহওয়া এতই প্রতিকূল বিবেচিত হতো যে একবার আরও অগ্রসর হবার একটি হুকুমকে রীতিমত নির্বাসন দণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।' ওয়াইজ এরপর বাঙালি সম্প্রদায় কিভাবে এবং কেন মুসলমান হলো তা ব্যাখ্যা করতে অনেকগুলো যুক্তি হাজির করেন। প্রথমত, তিনি কোন প্রামাণিক তথ্য উদ্ধৃত না করেই তরবারির ধর্ম তত্ত্বের শরণ গ্রহণ করলেন: 'ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ শতকে বাঙলার ভীতু জাতিগুলোর মাঝে ইসলামী বিশ্বাসের বিস্তৃতি ঘটানো উৎসাহী সৈনিকেরা তরবারির জোরে বলপূর্বক ধর্মান্তর করেছিল এবং পূর্বসীমান্তের গহন অরণ্যে প্রবেশ করে অর্ধচন্দ্রকার (ইসলামের প্রতীক অর্থে) পতাকাকে সিলেটের পল্লীগুলোতে স্থাপন করেছিল।' তিনি এই মতটিও গ্রহণ করেছিলেন যে, চট্টগ্রাম অঞ্চলটি আরব বনিকদের দ্বারা উপনিবেশিত হয়েছিল। কোন প্রামাণিক তথ্য উদ্ধৃত না করে তিনি আরও মত দেন যে, দ্বিতীয়োক্তরা চট্টগ্রাম উপকূলে ব্যাপকবিস্তৃত বাণিজ্য পরিচালনা করতো, যেখানে তারা 'মানুষজনের মাঝে তাদের ধর্মীয় ভাবনাগুলোর বিস্তার ঘটায়।' উপরন্তু, তিনি অভিমত প্রকাশ করেন যে, পূর্ব বাঙলার গ্রামগুলো থেকে ধৃত দাসেরা হয়তো মুসলিম জনসংখ্যার নিন্মসারিটির বিপুল স্ফীতি ঘটিয়েছে, কেননা মরিয়া এবং নিঃস্ব পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের মুসলমানদের কাছে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতো। তিনি আরও অভিমত দেন যে, 'খুন বা ব্যভিচারের শাস্তি থেকে রেহাই পাবার একমাত্র পথ হিসেবে হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়ে থাকতে পারে, কেননা এই পদক্ষেপটিকে উভয় অপরাধের একমাত্র পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে বিবেচনা করা হতো।' এই সবকিছুই ছিল প্রমাণহীন অনুমান।
সামাজিক মুক্তির প্রকল্পের একটি বিবৃতি হিসেবে এটা অত্যন্ত জোরালো। এবং এখানে আছে তত্ত্বটির সবগুলো অপরিহার্য উপাদান: আগে থেকেই ধরে নেয়া একটি অত্যন্ত স্তরবিন্যস্ত হিন্দু সামাজিক বিন্যাস, দাসসুলভ অস্পৃশ্যদের শোষিত একটি শ্রেণি, একটি নিপীড়ক ব্রাহ্মণ শ্রেণি, এবং সামাজিক সমতার একটি মতাদর্শ হিসেবে ইসলাম বিষয়ে এমন একটি প্রতীতি, জনতা যা 'আনন্দের সাথে' গ্রহণ করবে।
কিন্তু বাঙালি আশরাফ মুসলমানগণ এই যুক্তিধারা গ্রহণ করেননি। ওয়াইজ ব্রাহ্মণদের যেভাবে নিষ্ঠুর উৎপীড়ক হিসেবে চিত্রিত করেছেন তাতে সম্মতি দিতে তারা ইচ্ছুক থাকলেও বাঙালী মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যে এই বদ্বীপেরই ভূমিপুত্র, সেটা মানতে তারা গররাজি ছিলেন। কাজেই ওয়াইজের নিবন্ধ প্রকাশের এক বছর পর ১৮৯৫ সালে খন্দকার ফজলি রাব্বী তার দি অরিজিন অব দি মুসলমানস অব বেঙ্গল প্রকাশ করেন। তার পূর্বসূরী আবু গজনভীর মতই রাব্বীও 'ভূমিপুত্ররা বলপ্রয়োগের শিকার হয়ে অথবা স্বেচ্ছায় কোনো একটি সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন' এই মত প্রত্যাখ্যান করেন। বরঞ্চ তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, 'এই দেশের বর্তমান মুসলমানদের পূর্বপুরুষরা সুনিশ্চিতভাবেই ছিলেন সেই সব মুসলমানগণ যারা সাবেক সার্বভৌম শাসকদের আমলে নানান দেশ থেকে এখানে এসেছেন। বস্তুত, রাব্বী এই বদ্বীপের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতাকে এই প্রক্রিয়ার একটি প্রমাণ হিসেবেই দেখেছেন এই যুক্তিতে যে, অঞ্চলটি "বৈদেশিক আগ্রাসান থেকে বরাবরই নিরাপদ থেকেছে, এবং এরই ফলে মুসলমানদের জন্য তা একটা দারুণ অভয়াশ্রম গঠন করেছে।' বৈদেশিক আগ্রাসন থেকে মুসলমানদের রক্ষা করা এই একই প্রাকৃতিক সীমান্তগুলো কেন মুসলমানদের হাত থেকে বাঙালিদের রক্ষা করতে পারেনি, তা রাব্বী ব্যাখ্যা করেননি। সম্ভাব্য অনুমান হলো তিনি মুসলমানদের আগ্রাসনকারী হিসেবে বিবেচনা করেননি, বরং শ্রেফ অভিবাসী বসতি স্থাপনকারী হিসেবেই দেখেছেন।
'বিশিষ্ট মুসলমানদের' অনুকূলে বরাদ্দ করা অজস্র দাতব্য অনুদানের (আয়মা) কথাও উল্লেখ করে রাব্বী অভিমত দিয়েছেন যে, এগুলোই অভিবাসীদের বসতিগুলোর বুনিয়াদে পরিণত হয়েছে। তিনি লিখেছেন, 'বাঙলার তিনটি প্রাচীন বিভাজন, অর্থাৎ রাঢ় (দক্ষিনপশ্চিম), বরেন্দ্র (উত্তর) এবং বঙ্গ (পূর্ব) এর বেলায় দেখা যাবে, আয়মা সম্পত্তি পাওয়া যাবে সবচেয়ে বেশি রাঢ়ে, বরেন্দ্রতে কিছু পরিমানে, বঙ্গে এ তা প্রায় বিরল। কিন্তু এই যুক্তি ধারার সমস্যাটা এই যে, রাব্বীর মতানুযায়ী যেখানে এই দাতব্য মঞ্জুরি সবচেয়ে কম, ঠিক সেখানেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেখা মিললো। পৃথিবীর বৃহত্তম কৃষক জনগোষ্ঠীগুলোর মাঝে একটি কিভাবে ভূমি চাষ করতে অস্বীকৃতি জানানো উচ্চকূলজাত অভিবাসীদের বংশধরদের থেকে উদ্ভুত হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়েও লেখক সমস্যায় পড়েছেন। তিনি অনুমান করেছেন 'সহায় সম্পদ কমে আসলে' অথবা তাদের মাঝে যারা যোদ্ধা ছিলেন তারা সামরিক নিয়োগ লাভে ব্যর্থ হয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। পরবর্তীতে যখন কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং বাংলায় অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়, মুসলিম কৃষকদের এই শ্রেণিগুলো স্বাভাবিকভাবেই বহুগুন বৃদ্ধি পায়।
রাব্বীর গ্রন্থটি প্রকাশের পরপরই বিতর্কিত ১৯০১ সালের ভারতীয় আদমশুমারীটি অনুষ্ঠিত হয়। এটাতেও সেই অবস্থানগুলোই পুনর্ব্যক্ত করা হয় যেগুলোর বিরুদ্ধে গজনভী আর রাব্বী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। এই আদমশুমারীর প্রতিবেদনে ই.এ. গেইট এই উপসংহার টানেন যে, নিজেদের 'শেখ' (সম্প্রদায়গত পরিচয় জানতে চাওয়া হলে বাঙালি মুসলিম কৃষকের এটাই সাধারণ বৈশিষ্ট্যসূচক উত্তর) হিসেবে পরিচয় দেয়া মানুষদের দশ ভাগের নয় ভাগই সম্ভবত স্থানীয় বংশোদ্ভুত। বদ্বীপের বাইরে থেকে অভিবাসনকারীদের সংখ্যা আরও কম তো বটেই, এমনকি বাংলার অভ্যন্তরেই মুসলমান বসতিকারীদের উল্লেখযোগ্য কোন অভিবাসন আদৌ ঘটেছিল কি না গেইট সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। মুসলিম অভিবাসীরা সাধারণত পুরনো রাজধানীগুলোর আশেপাশে বেশি জমির জন্য আবেদন করতো এটা পর্যবেক্ষণ করে গেইট সিদ্ধান্ত নেন 'স্বেচ্ছায় তারা কোনদিন নোয়াখালী, বগুড়া আর বাকেরগঞ্জের ধানচাষের জলাগুলোতে ঘড়বাড়ি বানাতে যেতো না।'
বাঙলায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উচ্চসংখ্যা এখানকার সমাজের সরলতম গঠনের সাথে - অর্থাৎ বর্ণপ্রথার ন্যূনতম বিস্তারের সাথে - সম্পর্কিত, এই পর্যবেক্ষণটি ছিল চলমান বিতর্কে গেইটের গুরুত্বপূর্ণতম অবদান। মুসলমানদের সাথে পূর্বাঞ্চলে ভূমিপুত্র পোদ ও চণ্ডাল সম্প্রদায়ের এবং উত্তরাঞ্চলে রাজবংশী ও কোচ সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠতা লক্ষ্য করে গেইট মন্তব্য করেন যে, 'দেশের এই সব অঞ্চলে অন্যান্য বর্ণের হিন্দুদের অনুপাত এখনো খুবই কম, অতীতেও কমই ছিল। উত্তর বাংলায় রাজবংশী (যার মাঝে কোচরাও অন্তর্ভূক্ত) আর পূর্ব বাঙলায় চণ্ডাল ও অন্যান্য অনার্য সম্ভূত বর্ণসমূহ হলো প্রধান বর্ণ।' এই পর্যবেক্ষণটি এযাবতকাল বিতর্কটিকে ঘোলাটে আর পক্ষপাতদুষ্ট বানিয়ে রাখা চিন্তাভাবনায় যুগান্তর আনতে পারতো। কেননা এই তত্ত্বটাকেই আরেকটু অগ্রসর করে বলা যায় যেখানে সামান্য বর্ণপ্রথার বিস্তার, সেখানে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্য ছিল কম, এবং সেই কারণে অস্পৃশ্যদের ওপর ছিল কম অত্যাচার। এবং এমন অত্যাচার অনুপস্থিতিতে সামাজিক মুক্তির তত্ত্বটি ভেঙে পড়ে, কেননা বিদ্রোহ করার মত কোন সুদৃঢ় ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা 'নিচু বর্গগুলোর' সামনে এই স্থলে হাজির থাকে না।
কিন্তু গেইট তার নিজের পর্যবেক্ষণের তাৎপর্যগুলো নিয়ে আর অগ্রসর হননি; বস্তুত মুসলমানদের বিপুল অধিকাংশই স্থানীয় বংশোদ্ভুত, এটা বিবৃত করা ছাড়া ইসলামীকরণ বিষয়ে তার প্রস্তাবিত তত্ত্ব আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু ভারতের আদম শুমারীর মত প্রামাণিক নথিতে সেগুলো প্রকাশিত হবার কারণে এমনকি এই মতগুলোও গুরুত্ব পেতে থাকে। দ্রুতই সেগুলোর অবিকল অনুকৃতি করা হলো সেটেলমেন্ট প্রতিবেদনে এবং বিশ শতকের শুরুতে প্রকাশিত হতে শুরু করা বিপুল প্রভাবশালী বেঙ্গল ডিসট্রিক্ট গেজেটিয়ারেও। উদাহরণ স্বরুপ, নোয়াখালী জেলার গেজেটিয়ারে (১৯১১) বলা হয়েছে যে 'শেখদের বিপুল অধিকাংশ [অর্থাৎ মুসলিম কৃষক] এবং সম্প্রদায়ের নিন্মতর অংশসমূহ জেলার ভূমিপুত্র জাতিগুলো থেকে উদ্ভুত,' এখানে ভূমিপুত্র বলতে প্রধানত চণ্ডালদেরই বোঝানো হয়েছে। একইভাবে, বগুড়া আর পাবনা জেলার সেটেলমেন্ট প্রতিবেদনটি (১৯৩০) এই জেলাসমূহের মুসলিম সম্প্রদায়গুলোর উৎস খুঁজে পেয়েছে 'তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিককালে ধর্মন্তরিত হিন্দুদের' মাঝে, এখানে বলা হয়েছে যে 'জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ কোচদের বংশধর, যারা উত্তরবঙ্গের আদিবাসী।'
রিচার্ড এম. ইটন
১৯৪৭ সালের আগের দশকগুলোতে তিনটি নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষায় প্রাপ্ত উপাত্ত থেকেও কর্মকর্তাদের মাঝে সর্বসম্মত মতেরই সমর্থন মিললো। গবেষণা পদ্ধতি, নমুনা সংগ্রহের প্রণালী এবং বদ্বীপের অভ্যন্তরে সমীক্ষার অঞ্চলগত ভিন্নতা থাকলেও এগুলোর সবকটিই এ বিষয়ে একমত হলো যে বাঙালী মুসলমানের গরিষ্ঠ অংশ বহিরাগতদের উত্তরসূরী নন এবং তারা আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর বংশধর। ১৯৩৮ সালে সমীক্ষাগুলোর মাঝে প্রথমটি পরিচালিত হয় চব্বিশ পরগনা জেলায়, সেখানে ইলেন ম্যাকফারলেন উপসংহার টানেন যে 'বজ বজের মুসলমানদের রক্তের গ্রুপের উপাত্ত পরিস্কার ভাবে প্রদর্শন করে যে এই মানুষেরা নিচুজাতের হিন্দু ধর্মান্তরিতদের বংশধর, যেটা স্থানীয় লোককথাতেও বলা হয়, এবং তাদের বর্তমান কালের হিন্দু প্রতিবেশীদের মতই এই অনুপাত প্রায় একই সমান বজায় রয়েছে।' এর তিন বছর পর আবারও চব্বিশ-পরগনা জেলাতেই আরেকটি রক্তের গ্রুপের বন্টন বিষয়ক সমীক্ষা পরিচালনা করেন বি কে চ্যাটার্জি এবং এ কে মিত্র। এই সমীক্ষাতে তিনি নিন্মবর্ণের হিন্দুদের সাথে গ্রামীন মুসলমানদের তুলনা করেন, এর পাশাপাশি নগরবাসী মুসলমান ও অবাঙালী মুসলমানদের সাথেও গ্রামীণ মুসলমানদের তুলনা করেন। এই সমীক্ষায় গ্রামীণ মুসলমানদের সাথে তাদের নিন্মবর্ণের হিন্দু প্রতিবেশী মাহিষ্য আর বাগদীদের সমন্ধ পাওয়া যায়, এবং তারা আরও উপসংহার টানেন যে, নগরবাসী বাঙালি মুসলমান রক্তসম্পর্কের দিক দিয়ে গ্রামীণ মুসলমানদের সাথে নন, বরং বহু দূরবর্তী ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের পাঠানদের সাথে ঘনিষ্ঠতর। এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে নগরবাসী মুসলমানদের এই দাবিটি সারবত্তা পায় যে, বিদেশাগত অভিবাসীদের থেকে তাদের নিজেদের উৎপত্তি।
শেষ পর্যন্ত ডি এন মজুমদার এবং সি আর রাও ১৯৪৫ সালে - ১৯৪৭ সালে প্রদেশটির বিভাজন পরবর্তী বিপুল জনগোষ্ঠীর স্থানান্তরের ঠিক পূর্ববর্তী সময়ে - পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় বঙ্গ থেকে সংগৃহীত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত একটি সমীক্ষা ১৯৬০ সালে প্রকাশ করেন। দলগত বৈচিত্র নির্ধারণে আকৃতি, কপালের প্রস্থ এবং নাকের উচ্চতা ব্যবহার করে এই অনুসন্ধানকারীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছুলেন যে 'বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীর সম্ভাব্য একটি উদ্ভব আমাদের খোঁজা উচিত আদিবাসী গোত্র এবং তফশিলী অমুসলিম সম্প্রদায়েরই মাঝে... (বিভাগ পূর্ববর্তী) বাঙলার মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সংগৃহীত রক্ত সংক্রান্ত উপাত্তসমূহ একই মতের অনুবর্তী, সেটা হলো, বাংলার মুসলমানরা ভারতের বাইরের মুসলমানদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, এমনকি উত্তর প্রদেশের শিয়া ও সুন্নীদের সাথেও নয়। রক্তের গ্রুপের সাক্ষ্যের কোন তাৎপর্য যদি আদৌ থেকে থাকে তবে তা মুসলমানদের দেশজ উদ্ভবের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।' তারা আরও দেখতে পান মানবদেহ পরিমাপবিদ্যার অধিক গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর (মাথার দৈঘ্য এবং প্রস্থ, নাকের দৈর্ঘ্য, এবং প্রস্থ) সাপেক্ষে পূর্ব বাংলার মুসলিম ও অমুসলিম উভয় দলই পশ্চিমবঙ্গের দলগুলো থেকে মৌলিকভাবেই পৃথক। এই শেষ উদঘাটনটি এমনকি পশ্চিম থেকে পূর্ব বাংলায় অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে গুরুত্বহীন করে দেয়।
বিশ শতকের শুরুতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ত্বরান্বিত হতে থাকলে, এবং বিশেষ করে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে বৃটিশ ভারতে পৃথক মুসলিম 'বাসভূমি'র আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। তারপর থেকে ইসলামীকরণের নানান তত্ত্বের পক্ষে ও বিপক্ষে বিতর্ক উত্তপ্ততর হয়ে উঠতে থাকে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের ঝোঁক ছিল এই প্রশ্নটিকে পুরোপুরি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার, কেননা ভারতীয় সম্প্রদায়ের কোন বৃহৎ অংশের বৈদেশিক উদ্ভবের অথবা সম্প্রদায়ের মাঝে অতীতে ইসলামীকরণের যে কোন রকম স্বীকৃতি সকল ভারতীয় জনগণের মৌলিক ঐক্য এবং সমসত্ত্বা বিষয়ক জাতীয়তাবাদী অবস্থানকে দুর্বলতর করবে। মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের পছন্দসই সামাজিক মুক্তির ধর্ম প্রকল্পটিকে গ্রহণ করাটাও হিন্দুদের জন্য সহজ ছিল না, কেননা এটা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের স্থাপন করেছিল উৎপড়কের অপ্রীতিকর ভূমিকায়।
অন্যদিকে বহু মুসলমানের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশে পৃথক একটি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রশ্নটি ছিল মৌলিক, কেননা এটাই ভবিষ্যতের পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ন্যায্যতা গঠন করে। ফলে অভিবাসী তত্ত্বটিকে পুরোপুরি নাকচ করাকে এটা কঠিন করে ফেলেছিল, যদিও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাতিতাত্ত্বিক উপাত্ত ততদিনে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাংলার বেলায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষেরা ত্রয়োদশ শতকের বহু আগে থেকেই এই বদ্বীপের আদিবাসী ছিলেন। এটা কাউকে কাউকে পরিচালিত করলো অভিবাসী তত্ত্ব এবং সামাজিক মুক্তির ধর্ম প্রকল্প উভয়টিরই উপাদানগুলোর সমবায়ে সৃজিত একটি মিশ্রতত্ত্ব গ্রহণে। এই মতানুযায়ী আশরাফ অভিবাসীরা এই ভূমিতে বসতি করেছে এবং স্বাভাবিকীকৃত বাঙালিতে পরিণত হয়েছে, একই সময়ে বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকেরা দলে দলে ইসলামের সাম্যবাদী মতদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এই পারস্পরিক সমঝোতা আশরাফ ও আতরাফের সামাজিক দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছিলো এমনটা এই তত্ত্বে দাবি করা হয়েছে বলে ১৯৪৭ পরবর্তী মুসলিম সরকারগুলোর জন্য এই তত্ত্বটি মতাদর্শিকভাবে সুবিধাজনক হয়ে ওঠে, এরা সঙ্গতকারণেই তাদের সীমান্তের ভেতরে বসবাসরত সকল মুসলমানের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপে আগ্রহী ছিল।
ইতিহাস লিখন ধারার দিক দিয়ে ঊপনিবেশিক আমল এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের জের হিন্দু এবং মুসলমানকে দুটো সম্পূর্ণ পৃথক, এমনকি বিরোধী বর্গে মেরুকরণ করে, তারপর এই বর্গগুলোকে অতীতে প্রক্ষিপ্ত করে এবং প্রাকআধুনিক বাংলার ইতিহাসকে তাদের অন্তর্গত একটি দ্বন্দ্বের সাপেক্ষে পাঠ করে। বিখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ সুনীতি কুমার চট্টপাধ্যায় কর্তৃক ১৯৬৩ সালে লেখা তুর্কী বিজয়ের একটি বিকট চিত্রন দেখা যাক:
'এই নিষ্ঠুর ভিনদেশীদের বাংলাবিজয় ছিল যেন দেশটার ওপর দিয়ে বয়ে চলে যাওয়া ভয়ঙ্কর একটি ঘূর্ণিঝড়ের মত, যখন একটা শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী পাইকারী হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ, অপহরণ এবং পুরুষ ও নারীকে দাসে রুপান্তর, মন্দির, প্রাসাদ, মূর্তি এবং গ্রন্থাগার ধ্বংস এবং জবরদস্তি ধর্মান্তরকরণসহ কল্পনায় সম্ভব এমন সকল আতঙ্ক আর পীড়নের শিকার হলো। মেক্সিকো আর পেরু এবং আমেরিকার অন্যত্র স্প্যানিশ ক্যাথলিক কনকুইসটাডরদের মতই তুর্কী মুসলমানরাও দেশটির সংস্কৃতি ও ধর্মকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সেগুলোকে শয়তানী কীর্তিকলাপ হিসেবে চিহ্নিত করে।'
আর সুপরিচিত ভারতীয় বাঙালী ইতিহাসবিদ রমেশ চন্দ্র মজুমদার ১৯৭৩ সালে প্রাকআধুনিক বাঙলায় ইসলামের বিস্তারকে এইভাবে বিবৃত করেছেন:
'হিন্দু আর মুসলিম এই দুই সম্প্রদায় শক্ত দেয়াল ঘেরা দুটি দুর্গের অনুরূপ, যারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, প্রতিটির আছে মাত্র একটি ফটক,-- হিন্দুর বেলায় তা কেবল বের হবার আর মুসলমানের বেলায় তা কেবল প্রবেশের। স্পর্শ এবং পরিচ্ছন্নতার সামান্য ব্যত্যয় ঘটলেই হিন্দুরা সমাজচ্যুত হতেন, পুনঃপ্রবেশের কোন সুযোগ থাকতো না, আর একবার তারা ইসলামের দুর্গে প্রবেশ করা মাত্র এই নবাগতের জন্য বের হবার রাস্তাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতো। এই প্রক্রিয়াটির সাথে জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তর এবং বস্তুগত অর্জন বা লাভের আশায় স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরের সাথে মিলে ইসলামের বলয়মুখী হিন্দুদের একটা নিয়মিত ধারাপ্রবাহ তৈরি হয়, কদাচিত তা ঘটতো বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে।'
যে অনুমানটি সুনীতি কুমার চট্টপাধ্যায়ের উত্তপ্ত বাগবিস্তারে উহ্য এবং রমেশচন্দ্র মজুমদারের দুর্গ ও ফটকের সামরিক চিত্রনে প্রকাশ্য, তাহলো প্রতিটি ধর্মই কালোত্তীর্ণ, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং পরস্পর পরিত্যাজ্য। যদিও এই রকম অনৈতিহাসিক এবং আদর্শবাদী একটি প্রতীতি আধুনিক যুগেই সীমিত না, তবে বিশ শতকেই এটা বিশেষভাবে বিস্তার লাভ করেছে। বাংলাভাগ (১৯০৫) থেকে শুরু করে খুব কাছেই উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধূলিসাৎ (১৯৯২) করা পর্যন্ত ঊপনিবেশিক এবং উত্তর উপনিবেশিক রাজনীতিবিদরা এই ভাবনাটাকে উৎসাহিত করেছেন এবং তা থেকে ফায়দা লুটতে সমর্থ হয়েছেন। ইতিহাসবিদরাও ধর্মের এমন একটি ধারণা থেকে মুক্ত থাকেননি যেখানে কিছু গুনাবলীকে ধর্মের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বা বৈশিষ্ট্য হিসেবে ভাবা হয়, সুনীতিকুমার চট্টপাধ্যায় এবং রমেশচন্দ্র মজুমদার এই বিষয়গুলোকে শ্রেফ সময়ক্রমে পেছনের দিকে প্রক্ষিপ্ত করেছেন এবং বাংলার প্রাকআধুনিক ইতিহাসের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।
(চলবে)
[প্রবন্ধটি রিচার্ড এম ইটনের রাইজ অব ইসলাম অ্যান্ড দা বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। বাংলা অনুবাদ স্বত্ত্ব ইউপিএল কর্তৃক সংরক্ষিত]
Date published: 07 August, 2020, 11:45 pm